কমনওয়েলথ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক সংস্কারে তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারে তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। পরারাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ সামোয়ার রাজধানী আপিয়ায় গত ২১-২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ২৭তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে সদস্যভূক্ত দেশগুলোর ১.৫ বিলিয়ন তরুণদের টেকসই ভবিষ্যত গড়ার নিমিত্তে তরুণদের অধিকতর সম্পৃক্ত করার ওপর আলোকপাত করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কমনওয়েলথ নেতাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। আধুনিক কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে আয়োজিত এই সম্মেলন বৈশ্বিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
কমনওয়েলথ’র প্রধান যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস ২৫ অক্টোবর ‘এক স্থিতিস্থাপক অভিন্ন ভবিষ্যত: আমাদের কমনওয়েলথের রূপান্তর’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়াও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৫ অক্টোবরে সরকার প্রধানদের নির্বাহী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও তৌহিদ হোসেন ২৬ অক্টোবর সরকার প্রধানদের পশ্চাদপসরণের ওপর বক্তব্যে উপস্থাপন করেন।
তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক স্বৈরাচারী সরকার পরিবর্তনের পটভূমি এবং পরিবর্তন আনয়নে তরুণ প্রজন্মের ত্যাগ ও অবদেন তুলে ধরে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার নিমিত্তে কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন তরুণদের অধিকতর সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কমনওয়েলথ নেতাদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে নেতারা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে অলোচনা করার পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নিজেদের মধ্যে অধিকতর যোগাযোগ, বাণিজ্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইয়ুথ ফোরাম, বিজনেস ফোরাম, কমনওয়েলথ মিনিসটেরিয়াল মিটিং অন স্মল আইল্যান্ডস, গেস প্রি-সিএইচওজিএম ফরেন মিনিস্টারস মিটিং-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি সরকার প্রধানদের সম্মানে ব্রিটেনের রাজার নৈশভোজ ছাড়াও একাধিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে এবার মোট ৩৭টি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় যার একটি বাংলাদেশ ও সামোয়া যৌথভাবে আয়োজন করে। ‘ক্লাইমেট ভালনারেবিলিিিট এন্ড রেজিলিয়েন্ট ইয়ুথ শীর্ষক এ সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সামোয়ার মহিলা ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন।
উক্ত সাইড ইভেন্টে নামিবিয়া, জ্যামাইকা ও মালদ্বীপের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং মাল্টার পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও ৬০ জনেরও অধিক প্রতিনিধি যোগদান করেন। এ ইভেন্টে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে।
শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বাগদিক সামোয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এছাড়াতিনি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে দ্বি-পাক্ষিঢ়ৎ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ক বৈঠক করেন। বৈঠকসমূহে তিনি দেশগূলোর সাথে
সকল বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান মামলা কার্যক্রমের বিষয় জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যয়ের কথাও তুলে ধরেন।
সামোয়ায় কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে ফেরার পথে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। মত বিনিময় সভার পূর্বে নিউজিল্যান্ডের সিনেটর ফিল টোয়াইফোর্ড পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।