বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২,৩২৭ কোটি টাকা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আজ বলেছেন, আগস্টে বন্যার কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের পুঞ্জীভূত ক্ষতি হয়েছে ২,৩২৭ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আগস্ট মাসে ব্যাপক বন্যায় সারাদেশে কৃষি এবং মৎস্য ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ৪২৮ কোটি টাকা।
আজ মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের সাফল্য তুলে ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, ভয়াবহ বন্যায় সারাদেশে মৎস্য খাতে ১৩টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৬৬টি পুকুর ও হ্যাচারির ক্ষতি হয়েছে। এতে ১ লাখ ৭ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন মাছ ও চিংড়ি পোনা নষ্ট হয়েছে ৪৪ কোটি।
অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ টাকার অংকে ৪২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার গরু, ৮ হাজার মহিষ, ৯৩ হাজার ছাগল, ১০ হাজার ভেড়া, ৩৪ লাখ ২১ হাজার মুরগি, ৪ লাখ ৬০ হাজার হাঁস বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৯ হাজার গরু, ১৬ হাজার ছাগল, ২১ লাখ মুরগি, ২ লাখ হাঁস মারা গেছে। বন্যায় ৭ লাখ ৮২ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২২০ মেট্রিক টন দানাদার পশুখাদ্য, ৭৫ মেট্রিক টন খড় ও ৩৫৭ মেট্রিক টন সাইলেজ ও ৬০ হাজার উন্নত জাতের ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ১২ হাজার খামারিকে দেড় মাসের পশুখাদ্য প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জরুরি ওষুধ সরবরাহ ও টিকা প্রদানসহ প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার গবাদিপশু এবং হাঁসমুরগির চিকিৎসা প্রদান, ১ লাখ ২৩ হাজার গবাদিপশু এবং হাঁসমুরগির টিকা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে উপদ্রুত এলাকায় পশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এফএও’র মাধ্যমে ৮ হাজার ২৩৩ জন প্রান্তিক খামারিকে ৭৫ কেজি করে গো-খাদ্য বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ইআরডির নির্দেশনায় পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিপিপি প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, মৎস্য খামারিদের সরকারি মৎস্য রেণু উৎপাদন খামার থেকে স্বল্প মূল্যে পোনা সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের মাঝে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কার্যক্রমের আওতায় ১২টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় ৮ হাজার ৪৮৮ জন সুফলভোগী মৎস্যচাষী পুকুরে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫১ মেট্রিক টন পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষীদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ সংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নাওয়ারা জাহান, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।