অর্ধকোটি বানভাসি, প্রাণ গেছে ১৮ জনের

Aug 24, 2024 - 15:45
অর্ধকোটি বানভাসি, প্রাণ গেছে ১৮ জনের

দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি ১১ জেলাতেই সীমাবদ্ধ আছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তবে বেড়েছে বানভাসির সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮।

শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, “এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি।

“আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে- এ রকম পূর্বাভাস আমরা পেয়েছি। আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এই সময়ে হবিগঞ্জ মৌলভীবাজারের মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।” 

উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণে গত কয়েকদিন ধরে ভাসছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের বরাতে আলী রেজা বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এই সময়ে এই অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা এবং চট্রগাম অঞ্চলের ফেনী, গোমতী, হালদা- এই নদীগুলোর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।”

বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন মারা গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আগে ছিল ১৩ জন, এখন পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছে ১৮ জন। 

ফেনীর চারদিকে কেবল পানি আর পানি। ছবি: রয়টার্স

“এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, চট্রগ্রামে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১জন ও কক্সবাজারে ৩ জন।”

বন্যার্তদের জন্য ফেনীতে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব রেজা বলেন, “সেটি সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সমন্বিতভাবে পরিচালনা করবে। যারা বন্যাপীড়িত- তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

“মোট ৩৫২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে, আশ্রিত লোক ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন। আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ হাজার ৬৯৫টি গবাদি পশু নিয়ে আসা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, “চট্রগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী জেলায় যে বন্যা কার্যক্রম আছে; নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, ছাত্র প্রতিনিধিগণ, বিজিবি- সবাই জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।”

অতিরিক্ত সচিব রেজা জানান, বন্যাদুর্গত ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ টন। এছাড়া ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। 

স্মরণকালে এমন বন্যা দেখেনি ফেনী। ছবি: রয়টার্স।

শিশুদের খাবারের জন্য ৩৫ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

কোন নদী বিপৎসীমার কত উপরে

শনিবার সকাল ৯টায় দেশের ৬টি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল।

ওই সময় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১৬টি স্টেশনের মধ্যে ২২টি পয়েন্টে পানি বাড়ার প্রবণতা দেখা গেলও কমছিল ৮৪ পয়েন্টে আর অপরিবর্তিত ছিল ৪ পয়েন্টে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

খোয়াই নদীর পানি হবিগঞ্জের বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর মৌলভীবাজার পয়েন্টে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

চট্টগ্রামের রামগড় স্টেশনে ফেনী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

সকালে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের অমরশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছিল, আর শেওলা পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জের মারকুলী পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

আর ফেনীর পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হওয়ায় সেখানকার মুহুরী নদীর বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অতিভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এই বন্যায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত দেশের অন্তত ১১টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ওই সময় পর্যন্ত বন্যায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।