ইসরাইলে হামাসের হামলার বার্ষিকীতে বিশ্বব্যাপী স্মরণসভা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধাদের ইসরাইলের ওপর হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে। বার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম মোমবাতি প্রজ্বলন, স্মারক এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে তেল আবিব থেকে লন্ডন, প্যারিস এবং বার্লিন পর্যন্ত শহরগুলোতে। তেল আবিবে নোভা নৃত্য উৎসবে হামাসের আকস্মিক হামলায় নিহত ৩শ’৭০ জনের বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনরা ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় একটি কনসার্ট হলে মোমবাতি প্রজ্বলন করে। আজ ৭ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে আরও কিছু অনুষ্ঠিত হবে।
সঙ্গীতের তালে তালে তারা তাদের প্রিয়জনের জন্য মোমবাতি জ্বালিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করে। লন্ডনে হাজার হাজার লোক হাইড পার্কে জড়ো হয়ে ইসরাইলি পতাকা নেড়ে এবং গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের হামাসের হাতে জিম্মিদের মুখসহ প্ল্যাকার্ড বহন করেছিল। নিহতদের ছবি একটি বড় পর্দায় দেখানো হয় এবং উপস্থিত জনতা তাদের সম্মানে মোমবাতি জ্বালিয়েছিল।
আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মি.হেনরি গ্রুনওয়াল্ড এএফপি’কে বলেছেন, ‘যাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমরা তাদের স্মরণ করতে চাই এবং আমরা চাই বিশ্ব স্মরণ করুক।’ মিসেস ম্যান্ডি দামারি বলেছেন, তার মেয়ে এমিলি ছিল হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের একজন তার মেয়ের ‘জীবন পূর্ণ’। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেছেন, ‘আমাকে আবার তাকে আলিঙ্গন করতে হবে এবং তার হাসি দেখতে হবে।’
পুলিশ জানিয়েছে, বার্লিনে প্রায় ৬শ’ ৫০ জন লোক ৫ অক্টোবর একটি স্মরণ সভায় অংশগ্রহণ করেছিল এবং যারা অংশগ্রহণকারীদের অপমান করেছিল তাদের ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। প্যারিসে হামলার শিকারদের স্মরণে ৬ অক্টোবর হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। ন্যাশনাল ইহুদি তহবিলের প্রেসিডেন্ট মি. রবার্ট জেবিলি এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমরা এখানে জড়ো হয়েছি যারা হামাসের হামলায় নিহত হয়েছে এবং যাদের অপহরণ করা হয়েছে তাদের স্মরণে।’
জেনেভায় ৩শ’ লোক ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জড়ো হয়েছিল। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মেরন একটি ভিডিও বার্তা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে ‘হামাস এবং তার সমর্থকদের দায়ী করে একটি প্রস্তাব পাস করতে’ ব্যর্থ হওয়ার জন্য সংস্থাটির নিন্দা করেছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলায় ১,২০৫ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলি সরকারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী যার মধ্যে বন্দী অবস্থায় নিহত জিম্মি ও রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৪১,৮৭০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ৬ অক্টোবরের শেষের দিকে এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ হামলার এক বছর পর আমাদের অবশ্যই দ্ব্যর্থহীনভাবে ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথে দাঁড়াতে হবে এবং একটি দেশ হিসাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় সাহায্যের অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানান। ‘মধ্যপ্রাচ্যে এই সংঘাতের চলমান ভয়াবহ পরিণতি বেসামরিক নাগরিকদের বহন করায় আমাদের অন্য দিকে তাকাতে হবে না।’ জেরুজালেমে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ ১২ মাস আগে আক্রমণের শিকার হওয়ার মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে গাজার নিকটতম ইসরাইলি শহর সিদরতে একটি স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।