নোমান-সাজিদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো পাকিস্তান
দুই স্পিনার নোমান আলি ও সাজিদ খানের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতলো পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন পাকিস্তান ৯ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। ম্যাচে ১৯ উইকেট নেন নোমান ও সাজিদ।
মুলতানে প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের কাছে ইনিংস ও ৪৭ রানে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে নোমান ও সাজিদকে দলে ভিড়িয়েছিলো পাকিস্তান। ঐ টেস্টে নোমান ও সাজিদ মিলে ২০ উইকেট নিলে ১৫২ রানের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় পাকিস্তান। শেষ দুই ম্যাচে নোমান-সাজিদের ৩৯ উইকেট শিকারে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো পাকিস্তান।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার হার দিয়ে শুরুর পর তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ নিলো পাকিস্তান। এর আগে ১৯৯৫ সালে জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম টেস্ট হারের পর সিরিজ জিতেছিলো তারা। এছাড়াও ২০২১ সালের পর ঘরের মাঠে কোন সিরিজ এবং ২০১৫ সালের নভেম্বরের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ নিলো পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ২৪ রান করেছিলো ইংল্যান্ড। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৫৩ রানে পিছিয়ে ছিলো ইংলিশরা। জো রট ৫ ও হ্যারি ব্রুক ৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় দিন দলীয় ৬৬ রানে ব্রুককে আউট করে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নোমান। এরপর ব্যাটিং ধস নামে ইংল্যান্ডের। নোমান ও সাজিদের ঘূর্ণিতে ৪২ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় ইংলিশরা। ফলে ৩৭.২ ওভারে ১১২ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের মাটিতে এটিই সর্বনি¤œ দলীয় রান ইংলিশদের। রুট ৩৩ ও ব্রুক ২৬ রানে আউট হন। এছাড়া অধিনায়ক বেন স্টোকস ও উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথ ৩, গাস অ্যাটকিনসন ও জ্যাক লিচ ১০ রান করেন।
এই ইনিংসে পাকিস্তানের দুই স্পিনার নোমান ৪২ রানে ৬টি ও সাজিদ ৬৯ রানে ৪টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের তিন স্পিনার সাজিদ ৬টি, নোমান ৩টি ও এবং জাহিদ মাহমুদ ১টি উইকেট নিয়েছিলেন। ফলে ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে পাকিস্তানের তিন স্পিনার মিলে ২০ উইকেট শিকার করেন। মুলতানে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নোমান-সাজিদ মিলে ২০ উইকেট শিকার করেছিলেন। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থবারের মত পাকিস্তানের স্পিনাররা ম্যাচে ২০ উইকেট শিকার করেন। তিন ম্যাচ মিলিয়ে পুরো সিরিজে পাকিস্তানে স্পিনাররা ৭৩ উইকেট শিকার দখল করেছেন। যেকোন টেস্ট সিরিজের পাকিস্তানের স্পিনারদের এটিই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭১ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানের স্পিনাররা।
একাদশে একমাত্র পেসার হিসেবে ছিলেন আমের জামাল। স্পিনারদের দাপটে বলই করার সুযোগ পাননি তিনি। এই প্রথমবারের মত টেস্টে পাকিস্তানের কোন পেসার বলই করেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ১১২ রানে গুটিয়ে গেলে জয়ের জন্য মাত্র ৩৬ রানের টার্গেট পায় পাকিস্তান। মাত্র ১৯ বল খেলে ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। ৮ রান সংগ্রহ করে আউট হন সাইম আইয়ুব। ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ৫ এবং অধিনায়ক শান মাসুদ ৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। মাসুদের ঝড়ো ইনিংসে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো।
প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন পাকিস্তানের সৌদ শাকিল। দুই ম্যাচে ৪০১ রানে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছেন সাজিদ। সিরিজটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে বাংলাদেশকে হটিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে উঠলো পাকিস্তান। ১০ ম্যাচ শেষে ৪ জয় ও ৬ হারে ৩৩.৩৩ শতাংশ পয়েন্ট আছে পাকিস্তানের। ৯ ম্যাচে ৩ জয় ও ৬ হারে ৩০.৫৬ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টমস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ। ১৯ ম্যাচ শেষে ৪০.৭৯ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে আছে ইংল্যান্ড।