পূজায় পছন্দের পোশাক কিনতে শপিংমলে ভিড়, বেড়েছে বেচাকেনা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভালো বিক্রি হওয়ায় রাজধানীর শপিং সেন্টার, ফ্যাশন হাউস ও অন্যান্য খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রগুলোয় বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটছে। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সৃষ্ট নাজুক ও অনাকাক্ষিত পরিস্থিতির কারণে পূজায় বেচা-বিক্রি নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই আশঙ্কা এখন কেটে গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পূজা উপলক্ষে জমজমাট কেনাবেচা চলছে। সেখানে আড়ং, দেশী দশ, ইনফিনিটি, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন পোশাকের শো-রুম গুলোতে প্রচন্ড ভিড়। জুতার দোকানগুলোতেও দেখা গেছে গেল একই চিত্র। বাটা, বে এম্পোরিয়াম, এপেক্সসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের জুতার শো রুমে চলছে ধুম কেনাকাটা।
খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। সময় মতো ভিসা না পাওয়ায় অনেকে কেনাকাটা করতে প্রতিবেশী ভারতের কলকাতায় যেতে পারেননি। এ কারণে তারা এখন দেশেই কেনাকাটা করেছেন। আর এতে দেশের বাজারে বেচাবিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে বেশিরভাগ ফ্যাশন ব্র্যান্ড, পোশাকের খুচরা বিক্রেতা ও ইলেক্ট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলো নতুন পণ্য নিয়ে আসার পাশাপাশি মূল্য ছাড়সহ নানান অফার দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের হিসেব মতে, বাংলাদেশে উৎসব উপলক্ষে মোট বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশ হয় দুই ঈদে এবং বাকিটা হয় পহেলা বৈশাখ ও দুর্গাপূজায়। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পূজার সময় শাড়ি ও স্যালোয়ার-কামিজের বেশি চাহিদা থাকে। ক্রেতারা কাতান, সিল্ক ও নকশাদার শাড়ির প্রতি বেশি আগ্রহী। জামদানির চাহিদাও অনেক বেশি।
রাজধানীর কাঁঠাল বাগানের বাসিন্দা পলি দে তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরা শপিং মলে এসেছেন পূজার কেনাকাটা করতে। জানতে চাইলে তিনি বাসস’কে বলেন, গত দুই সপ্তাহে পরিবারের জন্য কেনাকাটায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তিনি তার বাবা, স্বামী ও ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কেনাকাটা সেরেছেন। এ ছাড়াও, তার মা ও অন্য নিকটাত্মীয়দের জন্য শাড়ি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক নানা পণ্যসামগ্রী কেনা হয়েছে।
বসুন্ধরা শপিং মল ছাড়াও রাজধানীর নিউ মাকের্ট, ধানমন্ডি হর্কার্স মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, যমুনা ফিউচার পার্ক, ধানমন্ডি ও পুরান ঢাকার বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সবারই বিক্রি বেশ বেড়েছে। এমনকি পাড়া-মহল¬ার ছোট ছোট দোকানেও সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। বেসরকারি ব্যাংকে চাকরিজীবী সৈকত দাসের সাথে দেখা হয় ধানমন্ডির হর্কার্স মার্কেটে। তিনি বাসস’কে জানান, ‘মা, স্ত্রী ও দুই বোনের জন্য আটটি শাড়ি কিনেছি।’ নিজের জন্য কিনেছেন শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট ও জুতা। তিনি বলেন, এই পূজা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। উপহার দেওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে। এবার মার্কেটে অনেক বেশি ভিড়। মনে হচ্ছে অন্য বারের তুলনায় বেচা-বিক্রি বেশি হচ্ছে।
গাউছিয়া মার্কেটের ফাহাদ ফ্যাসন হাউজের মালিক মো. ফরহাদ হোসেন সাজু জানান, এবছর পূজায় বেচাকেনা ভালো। দুর্গাপূজা শুরুর পর কমপক্ষে আরও তিন দিন বিক্রি অব্যাহত থাকে। বিচিত্রা কসমেটিকসের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, কসমেটিকসের কেনাকাটা সারা বছরই চলে। এখনও চলছে। তবে পূজা ঘিরে চাহিদা বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে, পুরাতন ঢাকার শাঁখারি বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পূজার প্রস্তুতি ঘিরে প্রতি বছরের মত পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারীবাজারের দোকানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। শাঁখা, শঙ্খ, প্রতিমার কাপড়, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরবাতি, ঠাকুরের মালা, কদম মালা, জবের মালা, মুকুট থেকে শুরু করে শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ অলঙ্কারের দোকানগুলোয় চলে কেনাকাটার ধুম।
মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয়ের সৌমিত্র দাস জানান,শাঁখা, আলতা, সিঁদুর, প্রদীপসহ অন্যান্য উপকরণও বিক্রি হচ্ছে। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। এবার দেবী দূর্গার মর্তে আগমন দোলায় আর স্বর্গে গমন ঘোটকে।