বন্যার্তদের জন্য ঐক্যবদ্ধ জাতি: স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষার্থী ও সশস্ত্র বাহিনী কাজ করছে একসঙ্গে

Aug 24, 2024 - 16:03
বন্যার্তদের জন্য ঐক্যবদ্ধ জাতি: স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষার্থী ও সশস্ত্র বাহিনী কাজ করছে একসঙ্গে

বন্যাতর্দের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছে। যে যার জায়গা থেকে যেভাবে পারছেন সেভাবেই দাঁড়াচ্ছেন বানভাসি মানুষদের পাশে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ অনেকে কভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিক-আপ ভরে নিয়ে যাচ্ছেন শুকনো খাবার, জরুরি ওষুধ, নিরাপদ পানি, চাল-ডাল। বানভাসিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছাসেবী মানুষ ট্রাকে করে নৌকা-স্পিডবোট নিয়ে বন্যায় প্লাবিত এলাকায় মানুষজনকে উদ্ধারে যাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, দুর্যোগ ঘিরে এমন ‘একতাবদ্ধ’ আগে দেখা যায়নি।
আবার বন্যার্তদের সহযোগিতায় অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মীরা একদিনের বেতন দান করেছেন।
 
টিএসসিতে চলছে ‘গণত্রাণ সংগ্রহ’ কার্যক্রম:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় টিএসসিতে গত বৃহস্পতিবার থেকেই চলছে গণমানুষের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি।
শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগে অংশীদার হতে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী নগদ অর্থ কিংবা ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দিতে আসেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।

আরও পড়ুন: বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু, ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে এই কার্যক্রমে প্রথম দিনেই অসংখ্য মানুষ সাড়া দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান প্রথম দিনেই প্রচুর খাদ্য সামগ্রী, পোশাক, স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানুষ ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান, রিকশা, প্রাইভেটকার ভর্তি করে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছেন।

গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ছোট বাচ্চাদের বাসায় জমানো টাকা দিয়ে দিতে দেখা গেছে। এমন অনেকেই যার যার অবস্থান থেকে দাঁড়িয়েছেন।

এরই মধ্যে ত্রাণসামগ্রীতে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া, গেমসরুম ভর্তি হয়ে যাওয়ায় সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামসহ টিএসসির বারান্দায় রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি নগদ টাকাও উঠছে। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসা গাড়ির লম্বা লাইন লেগে গেছে টিএসসি এলাকায়। ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেজিংয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী কাজ করছেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেডিকেল টিমের সমন্বয়ক আব্দুল মুনীম বলেন, সাধারণ জনতার এমন একতাবদ্ধ প্রয়াস আগে কখনো দেখা যায়নি। সবাই নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। আমরা মানুষের এমন সাড়ার ব্যাপারে অবাক হয়েছি। মনে হচ্ছে, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। এটি আমাদের প্রথম পরীক্ষা। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সবাই মিলে একসঙ্গে এই পরীক্ষা জয় করব।

ঢাকার রাস্তাসহ পাড়া মহল্লায় ত্রাণের অর্থ সংগ্রহ:

বন্যার্ত এলাকার মানুষের জন্য অর্থ ও খাবার দিতে ঢাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় শিক্ষার্থীরা টাকা উঠাচ্ছেন। এছাড়া পাড়া মহল্লায় যুবসমাজ অর্থ সংগ্রহ করছেন।

বন্যার্ত এলাকায় কাজ করছে পুলিশ, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনী:

বন্যার্তা এলাকায় মানুষজনের সহযোগিতায় কাজ করছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থা।পাশাপাশি শুকনা খাবারসহ রান্না করা খাবারও দিচ্ছেন।

এছাড়া এরকম এলাকাগুলোতেই হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।

বন্যার্তদের সহযোগিতায় ১ দিনের বেতন:

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। বন্যার্তদের সহযোগিতায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্যরা।

এছাড়াও আরও সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গঠন করা হয়েছে ত্রাণ তহবিল।

বন্যার্তদের জন্য ফ্রি মিনিট ও ইন্টারনেট দিয়েছে মোবাইল অপারেটররা:

বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ফ্রি টকটাইম ও ইন্টারনেট সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে দেশের মোবাইল অপারেটররা। দেশের ৪টি বেসরকারি অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল এবং সরকারি অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের পক্ষ থেকে এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে জুমার নামাজে বয়ানে ইমামদের আহ্বান ও দোয়া:

শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ মসজিদগুলোতেই খতিবরা জুমার নামাজের আগের খুতবায় বর্তমান পরিস্থিতি ও বন্যার্তদের ভয়াবহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন। বানভাসি মানুষের পাশে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মসজিদের খতিবরা। পাশাপাশি দোয়া কামনা করে মোনাজাত হয়েছে। এছাড়া মসজিদে কমিটির পক্ষ থেকে মুসল্লিদের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিনামূল্যে প্লেনের টিকিট রি-বুকের সুযোগ পাবেন:

দেশের বিভিন্ন জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে যেসব যাত্রী ফ্লাইট মিস করছেন তারা বিনামূল্যে প্লেনের টিকিট রি-বুকের সুযোগ পাবেন। পরবর্তী তারিখে বিনামূল্যে প্লেনের টিকিট রি-ইস্যু বা রি-বুক করতে নির্দেশনা দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চলাচলকারী ৩৩টি এয়ারলাইন্সকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম এয়ারলাইন্সগুলোকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অনেক যাত্রী বিমানবন্দরে আসতে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকে তাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ধরতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের যাত্রীদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হচ্ছে।