বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করবে
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষে গঠিত 'বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন' বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করবে। আজ রাজধানীতে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে 'বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের' তৃতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কমিশন প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান এ কথা বলেন। এ সময় সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হকও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন। আগামীকাল বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেছেন, বিচার বিভাগের সাথে স্টেক হোল্ডার তথা আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করবে কমিশন। বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, আজ তৃতীয় দিনের মত সংস্কার কমিশন বৈঠকে বসে। কমিশনের কার্যক্রম কিভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে এ বিষয়ে এজেন্ডা প্রয়োজন। আজ বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক এজেন্ডা ঠিক করা হয়েছে। কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের দেশের অধস্তন আদালতের কার্যক্রমে ত্রুটি-বিচ্যুতি বিদ্যমান। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নিয়ে আজ বৈঠকে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, অধস্তন আদালতে মামলা মোকদ্দমার প্রয়োজনে যারা আসেন তারা দিশেহারা হয়ে যান। এখানে নানা হয়রানি ও খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে তা থেকে কিভাবে রিলিফ দেয়া যায় এ নিয়ে কমিশন সুপারিশ করবে। পাশাপাশি বিচার প্রার্থীদেরকে সহায়তায় লিগ্যাল এইডসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে কিভাবে আরও সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।
কমিশন প্রধান বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা বিষয়ে আমরা সুপারিশ করবো। সংস্কার কমিশনের কাজই হল সুপারিশ করা। কোনরূপ আইন বিধি-বিধান তৈরির এখতিয়ার সংস্কার কমিশনের নয়। এটি উপদেষ্টা পরিষদ দেখবে। তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত গেজেটে ৯০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ দেয়া জটিল হলেও আমরা চেষ্টা করব।
সময় বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের এখতিয়ার বলে মন্তব্য করেন কমিশন প্রধান। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত করবে। কমিশন প্রধান বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বদল হয়েছে। কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলা কিভাবে করা যায় তা দেখা হবে।
সংস্কারের লক্ষ্য হচ্ছে ভাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সংস্কারের ক্ষেত্রে কমিশন যে সমস্ত বিষয় নিরূপণ করবে তা লিখিত আকারে প্রকাশ করা হবে। সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত গেজেটের আলোকে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব। বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষে গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক হয় ৬ অক্টোবর ও দ্বিতীয় বৈঠক হয় ৮ অক্টোবর। আজ হয় তৃতীয় বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। কমিশনের অন্যান্য সদস্য বৈঠকে অংশ নেন।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৩ অক্টোবর গঠন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে এই কমিশন গঠন করে ওইদিনই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে সদস্য রয়েছেন-বিচারপতি এমদাদুল হক।
(হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ), বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ), সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার), মাজদার হোসেন (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার বাদী), তানিম হোসেন শাওন (সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট), কাজী মাহফুজুল হক (সুপন), এসোসিয়েট প্রফেসর, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিশন সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন অন্তর্বরর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে। প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা কমিশনের চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। কমিশন প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে যাবে।