বিচার বিভাগে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সুপারিশ করা হবে : সংস্কার কমিশন

Oct 8, 2024 - 19:51
বিচার বিভাগে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সুপারিশ করা হবে : সংস্কার কমিশন

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেছেন, বিচার বিভাগে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সুপারিশ করা হবে। আজ রাজধানীতে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের’ দ্বিতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হকও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন। আগামী সোমবার বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

কমিশন প্রধান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, হস্তক্ষেপমুক্ত বিচার বিভাগ চাইবো। কমপ্লিট সেপারেশন অব জুডিশিয়ারি বলে কিছু নেই। মামলায় বিচার হলে রায় কার্যকর করবে কে? সরকার। তাহলে দেশ চালাতে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এ্যাবসিলিউট সেপারেশন বলে কিছু নেই। বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, বিচার বিভাগ না থাকলে দেশ চলতে পারবে না। তবে, বিচার বিভাগের কথা সবাইকে শুনতে হবে। আমরা চাইব যেন হস্তক্ষেপ না হয়। নির্বাহী বিভাগ যাতে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সে বিষয়ে সুপারিশ, প্রস্তাবনা দেয়া হবে। রায় পছন্দ না হলে আপিলের সুযোগ আছে। কারণ রায়ে তো দুই পক্ষকে খুশি করা যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক নিয়োগের একটা নীতিমালা করে দেব। একজন এসে বলবে যে, অমুক আমার চাচা, তাকে জজ বানাতে হবে- এটা যাতে না হয় সেজন্য নীতিমালাটা করব। তিনি আরও বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত করবে। রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার ব্যাপারে আমাদের রিজার্ভেশন রয়েছে। আমরা সুপারিশ দেব। সেটি নিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে উপদেষ্টা পরিষদ।

কমিশন প্রধান বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে সরকার থেকে এখনো কোন গাইডলাইন আমরা পাইনি। হয়তো এরই মধ্যে পেয়ে যাব। তিনি বলেন, আমরা জনসাধারণের সুবিধা কিভাবে হয় সেটি দেখবো। বিচারকার্য বিলম্ব যেন না হয় এবং বিচার প্রার্থীর খরচ যেন কম হয় এ বিষয়টি নিশ্চিতে সুপারিশ করবো।  তিনি বলেন, মামলা রুজু করতে এসে একজন বিচারপ্রার্থীকে বিবিধ খাতে খরচ করতে হয়। এই খরচ কমানোর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। দেশের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে সরকারই বাদীর খরচ চালাবে। যে মামলায় হেরে যাবে তাকে ওই খরচার অর্থ বহন করতে হবে। 

তিনি বলেন, কোন মামলা দায়েরের পর সমন ইস্যু করা হলে ওই সমন জারি করতে বাদী ও আদালতের কারণে অনেক সময় দীর্ঘসূত্রিতা হয়। তা নিরসনে সুপারিশ করা হবে। আজ আমরা বৈঠকে এ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি।  কমিশন প্রধান বলেন, সরকার কমিশনকে ৯০ দিনের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে এই সময়ের মধ্যেই আমরা সংস্কারের সুপারিশ দেয়ার চেষ্টা করবো। দেশে ৪৩ লাখ মামলার জট রয়েছে তা কিভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে এ প্রশ্নে কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, দেশে বিদ্যমান মামলা জট কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকবে। কি কারনে এ বিশাল মামলা জট তাও নিরূপণ করা হবে।

বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক হয় ৬ অক্টোবর। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। কমিশনের অন্যান্য সদস্যগণ বৈঠকে অংশ নেন। বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৩ অক্টোবর গঠন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে এই কমিশন গঠন করে ওইদিনই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে সদস্যরা হলেন, বিচারপতি এমদাদুল হক (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ), বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ), সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার), মাজদার হোসেন (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার বাদী), তানিম হোসেন শাওন (সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট), কাজী মাহফুজুল হক (সুপন), এসোসিয়েট প্রফেসর, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিশন সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে। প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা কমিশনের চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। কমিশন প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে যাবে।