ব্যাটিং ব্যর্থতার পর তাইজুলের নৈপুণ্যে লড়ছে বাংলাদেশ
ব্যাটিং ব্যর্থতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে চাপে পড়লেও স্পিনার তাইজুল ইসলামের হাত ধরে লড়াইয়ে ফিরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ১০৬ রানের জবাবে প্রথম দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৪০ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৪ রানে এগিয়ে প্রোটিয়ারা। দুই দলের বোলারদের নৈপুন্যে আজ প্রথম দিন ১৬ উইকেটের পতন হয়েছে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে ৬ রান তুলে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বিচ্ছিন্ন হন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ওয়াইন মুল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন সাদমান। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করে ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সর্বশেষ টেস্টে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মোমিনুল হক। মুল্ডারের বলে উইকেটের পেছনে কাইল ভেরেনিকে ক্যাচ দেন মোমিনুল। ৬ বলে ৪ রান করেন তিনি। মোমিনুলের মত ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক নাজমুলও। মুল্ডারের বলে এক্সট্রা কাভারে কেশব মহারাজকে ক্যাচ দেন ১টি চারে ৭ বলে ৭ রান করা নাজমুল। ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ইনিংসের শুরুতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের উইকেট পতন ঠেকান জয় ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। সর্তকতার সাথে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ভালোভাবেই সামাল দেন দু’জনে। ৪৮ বল খেলে ১৯ রান যোগ করেন তারা। কিন্তু জুটির ৪৯তম বলে মুশফিককে বোল্ড করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার কাগিসো রাবাদা। ২টি বাউন্ডারিতে ২০ বলে ১১ রান করেন মুশফিক। এর মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্টে ৩’শ উইকেটর পূর্ণ করেন রাবাদা। মুশফিকের পর সাজঘরে ফিরেন লিটন দাস। রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ট্রিস্টান স্টাবসের দারুন ক্যাচে আউট হন ১ রান করা লিটন।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুই পেসার মুল্ডার ও রাবাদার তোপে ৪৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। দুই পেসারের পর স্পিনার হিসেবে উইকেট শিকারের তালিকায় নাম তুলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মহারাজ। ৩টি চারে দারুন শুরু করা মেহেদি হাসান মিরাজকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন মহারাজ। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি মিরাজ। ২৪ বলে ১৩ রান করেন মিরাজ।
২৭তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজের আউটের পর দিনের প্রথম সেশন শেষ হয়। এসময় ২৬.১ ওভারে ৬ উইকেটে ৬০ রান তুলেছিলো বাংলাদেশ। ১টি চারে ৮৬ বলে ১৬ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন জয়। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের উইকেট পতনের মিছিল বিরতির পরও অব্যাহত ছিলো। ৪ বলের মধ্যে স্বীকৃত শেষ দুই ব্যাটারকে হারায় টাইগাররা। ৩০তম ওভারের শেষ বলে উইকেটে সেট ব্যাটার জয়কে থামান অফ-স্পিনার ড্যান পিট। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৭ বলে ৩০ রান করে বোল্ড হন জয়।
৩১তম ওভারের তৃতীয় বলে অভিষিক্ত জাকের আলিকে শিকার করেন মহারাজ। উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড আউট হন ১৫ বলে ২ রান করা জাকের। ৭৬ রানে অষ্টম উইকেট পতনে ১’শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হতে দেননি নাইম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে ৪৬ বলে ২৬ রানের জুটিতে টাইগারদের রান ১শ পার করেন তারা।
দলীয় ১০২ রানে নাইমকে ৮ রানে শিকার করে জুটি ভাঙেন রাবাদা। কিছুক্ষণ বাদে তাইজুলকে বোল্ড করে বাংলাদেশের ইনিংস ১০৬ রানে শেষ করেন মহারাজ। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটি সর্বনি¤œ রান বাংলাদেশের। ২টি চারে ১৬ রান করেন তাইজুল। মুল্ডার ২২ রানে, রাবাদা ২৬ রানে ও মহারাজ ৩৪ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ পেসার হাসান মাহমুদের ইনসুইংয়ে বোল্ড হন প্রোটিয়া অধিনায়ক আইডেন মার্করাম। ১টি চারে ৬ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান হাফ-সেঞ্চুরিতে নেন আরেক ওপেনার টনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবস। স্টাবসকে ২৩ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে ব্রে-থ্রু এনে দেন তাইজুল। ব্যক্তিগত ৮ রানে মিরাজের বলে জয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছিলেন স্টাবস।
তাইজুলের বলে ব্যক্তিগত ১০ রানে সাদমানের হাতে জীবন পেলেও ১১ রানের বেশি করতে পারেননি ডেভিড বেডিংহাম। উইকেটরক্ষক লিটনের ক্যাচ দিয়ে তাইজুলকে উইকেট দেন বেডিংহাম। চতুর্থ উইকেটে বড় জুটির ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন জর্জি ও রায়ান রিকেলটন। কিন্তু তাদের ২৭ রানের বেশি যোগ করতে দেননি তাইজুল। ২৮তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। ওভারের দ্বিতীয় বলে জর্জিকে ৩০ রানে আউট করেন তিনি। এরপর শেষ বলে রানের খাতা খুলতে না পারা অভিষিক্ত ম্যাথু ব্রিটস্কিকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তাইজুল। এই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ২’শ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। ৯৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ষষ্ঠ উইকেটে ৯ রানের ছোট জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১’শ স্পর্শ করার পাশাপাশি দলকে লিড এনে দেন রায়ান রিকেলটন ও কাইল ভেরেনি। দলীয় ১০৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান তাইজুল। উইকেটের পেছনে লিটনকে ক্যাচ দেন ৪টি চারে ২৭ রান করা রিকেলটন। এই উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন তিনি। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন কাইল ভেরেনি ও ওয়াইন মুল্ডার। আলো স্বল্পতার কারনে ৬ ওভার আগেই শেষ হয় দিনের খেলা। ভেরেনি ১৮ ও মুল্ডার ১৭ রানে অপরাজিত আছেন। তাইজুল ৪৯ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
ক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১০৬/১০, ৪০.১ ওভার (জয় ৩০, তাইজুল ১৬, মুল্ডার ৩/২২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ১৪০/৬, ৪১ ওভার (জর্জি ৩০, রিকেলটন ২৭, তাইজুল ৫/৪৯)।