রাদারফোর্ডের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়
শেরফানে রাদারফোর্ডের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে গত ছয় বছরে টানা ১১ ওয়ানডে ম্যাচে হারের বৃত্ত থেকে রক্ষা পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতরাতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৯৫ রানের টার্গেট তাড়া করে ৫ উইকেটে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৮০ বলে ১১৩ রান করেন রাদারফোর্ড।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সফরকারী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশকে ২৯ বলে ৩৪ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে পেসার আলজারি জোসেফের বলে সৌম্যর বিদায়ে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩টি চারে ১৯ রান করেন সৌম্য।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ৭ বলের বেশি টিকতে পারেননি লিটন দাস। পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে উইকটের পেছনে ক্যাচ দেন ২ রান করা লিটন। ৪৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর তৃতীয় উইকেটে তানজিদকে নিয়ে বাংলাদেশের রান ১শ পার করেন মিরাজ। ৪৫ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি তানজিদ। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬০ বলে ৬০ রান করে জোসেফের দ্বিতীয় শিকার হন তানজিদ। মিরাজের সাথে ৯৭ বলে ৭৯ রান যোগ করেন তানজিদ।
৭১ বলে ওয়ানডেতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনবার জীবন পাওয়া মিরাজ। শূন্যতে রিভিউ নিয়ে ১ ও ৩১ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান তিনি। চতুর্থ উইকেটে মিরাজকে নিয়ে ৬২ বলে ৫৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন এক বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা আফিফ হোসেন। উইকেটে সেট হয়ে ২৮ রানে আউট হন ৪টি বাউন্ডারি মারা আফিফ। শেফার্ডের বলে ছক্কা মারতে ডিপ স্কয়ার লেগে জেইডেন সিলেসকে ক্যাচ দেন তিনি।
আফিফ ফেরার পর দলের রান ২শ স্পর্শ করার আগেই সাজঘরে ফিরেন মিরাজ। সিলেসের বলে রাদারফোর্ডকে ক্যাচ দিয়ে ৭৪ রানে আউট হন তিনি। ১০১ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মত নেতৃত্ব দিতে নামা মিরাজ। ৩৭.৩ ওভারে দলীয় ১৯৮ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মিরাজের আউটে জুটি বাঁধেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলি। ৪৪তম ওভার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উপর চড়াও হন এই দুজন। এতে শেষ ৭ ওভারে ৬৯ রান আসায় ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দু’জনের জুটিতে আসে ৭৪ বলে ৯৬ রান।
ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়ানডেতে ৩০তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদুল্লাহ। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে প্রথম ওয়ানডে হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ৪০ বলে ৪৮ রান করে থামেন জাকের। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে ৪৪ বলে অপরাজিত ৫০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। জাকের ও মাহমুদুল্লাহর ইনিংসে সমান ৩টি করে চার-ছক্কা ছিলো। শেফার্ড ৩টি ও জোসেফ ২টি উইকেট নেন।
২৯৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে নবম ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অষ্টম ওভারে ব্র্যান্ডন কিংকে ৯ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেক ওপেনার এভিন লুইসকে ১৬ রানে লেগ বিফোরে সাজঘরে পাঠান নাহিদ রানা। ২৭ রানে ২ উইকেট পতনের পর ৬৭ রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লড়াইয়ে ফেরান কেসি কার্টি ও অধিনায়ক শাই হোপ। ২টি চারে ২১ রান করার পর কার্টিকে শিকার করেন স্পিনার রিশাদ হোসেন।
দলীয় ৯৪ রানে কার্টি ফেরার পর রাদারফোর্ডকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন হোপ। ৬২ বলে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি পূর্ণ করেন তারা। আর ৬০ বলে ওয়ানডেতে হোপ ২৬তম এবং ৪৭ বলে ষষ্ঠ অর্ধশতক করেন রাদারফোর্ড। ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে হোপ-রাদারফোর্ডের জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন মিরাজ। ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে জাকেরকে ক্যাচ দেন হোপ। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৮ বলে ৮৬ রান করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। রাদারফোর্ডের সাথে ৯৩ বলে ৯৯ রানের জুটি গড়েন হোপ।
তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে হোপ যখন ফিরেন তখন দলের রান ১৯৩। এসময় ৭৭ বলে ১০২ রান দরকার ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপর জাস্টিন গ্রেভসকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন রাদার্রফোর্ড। তানজিমের করা ৪১তম ওভারে ১৩ রান, মিরাজের ৪২তম ওভারে ১০ ও তাসকিনের ৪৩তম ওভারে পরপর দুই ছক্কায় ১৫ রান তুলে ম্যাচের লাগামটা হাতের নাগালে নেন তারা।
পেসার সৌম্যর করা ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে ক্যারিয়ারের দশম ওয়ানডেতে এসে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান রাদারফোর্ড। এজন্য ৭৭ বল খেলেছেন তিনি। ৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৮০ বলে ১১৩ রান করেন রাদারফোর্ড। তার বিদায়ের সময় জয় থেকে ৭ রান দূরে ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪ বল বাকী রেখে ৪৮তম ওভারের চতুর্থ বলে দলের জয় নিশ্চিত করেন গ্রেভস ও রোস্টান চেজ। ৫টি চারে ৩১ বলে গ্রেভস ৪১ ও চেজ ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
পঞ্চম উইকেটে রাদারফোর্ড ও গ্রেভস ৭৪ বলে ৯৬ রানের জুটিতে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৬৫ রান তাড়া করে জিতছিল ক্যারিবীয়রা। তানজিম-রানা-রিশাদ-মিরাজ ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাদারফোর্ড। ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৯৪/৬ (মিরাজ ৭৪, তানজিদ ৬০, মাহমুদুল্লাহ ৫০*, জাকের ৪৮, শেফার্ড ৩/৫১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৭.৪ ওভারে ২৯৫/৫ (রাদারফোর্ড ১১৩, হোপ ৮৬, গ্রেভস ৪১*, রিশাদ ১/৪৯, সৌম্য ১/২৪)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : শেরফানে রাদারফোর্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।