রিজভী আহমেদ: আরোবী’র পড়ালেখার দায় তারেক রহমানের, ফ্যাসিস্টের পুনরুত্থান আর হবে না
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র প্রধান উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিশ্বের কোথাও কখনোই ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি। বাংলাদেশেও আর কখনোই ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হবে না।
গণঅভ্যুত্থানে পতিত ফ্যাসিস্টরা কোনো দেশেই আর সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতালি জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি। নিজ দেশের শিশুদের রক্ত যারা গ্লাসে-গ্লাসে পান করে, তাদের আবার রাজনীতি কিসের! তাদের পুনরুত্থান হলে তো আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছে, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে, তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করবে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে যারা সোচ্চার ছিলেন, যাদের গত সাড়ে ১৫ বছর গুম, নির্যাতন এবং গায়েবি মামলায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর নেমে আসবে শেখ হাসিনার প্রাণবিনাশী কর্মসূচি !
রিজভী আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত (শহিদ) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি- বিইউবিটি’র শিক্ষার্থী তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপচারিতা শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন।
এ সময় স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনে শহিদ তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেমনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা জ্ঞাপনের পাশাপাশি উভয় পরিবারকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়। এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র পক্ষ থেকে শহিদ মাসুদ রানারবারকে জানানো হয়, তার শিশু কন্যা আরোবী’র পড়ালেখার দায়-দায়িত্ব এখন থেকে তারেক রহমানের।
অন্যান্যের মধ্যে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুল বাছিত আঞ্জু, যুবদল নেতা শাকিল মোল্লা, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মিথুন, সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ, শাহাদত হোসেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসনাইন নাহিয়ান সজীব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যে দুই পরিবার আমরা দেখে গেলাম, সে-দুই পরিবারেরই নিজ-নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তারা দুজন। শহীদ মাসুদ রানার রোজগার দিয়ে চলতো তার পরিবার। তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা অসহায়। তার শিশুকন্যা আরোবী ফেরদৌস’র হৃদয় বিদাড়ক আর্তনাদ মানবতাবাদী মানুষের পক্ষে সহ্য করা সত্যিই কষ্টকর। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শহিদ তাহমিদ’র প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, ‘এই ছেলেটি এমএ পাস করলে তার চাকরি হতো। তার পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। সেমি বস্তির মতো জায়গায় তারা বসবাস করে। কতো স্বপ্ন নিয়ে তারা লেখা পড়া করেছে। এরা তো নিজের জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র কিনেছে। এটা যেন ব্যর্থ না হয়। এ সমস্ত পরিবার যেন না খেয়ে থাকে না। আপনাকে অনুরোধ করব, যেসব পরিবারে শহীদ হয়েছে, তাদের কোনো ভাই বা স্ত্রী যেই থাকুক তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ি সরকারি কোনো চাকরি যেন দেওয়া হয়। জরুরীভাবে এটা প্রয়োজন।’ এ সময় রুহুল কবির রিজভী স্বৈরাচারের দোসরদের অপকর্মের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সমবায় ব্যাংকে জমা রাখা ৭ হাজার ৩ শ’ ৯৮ ভরি সোনা ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি।
তিনি বলেন, ‘কী আজব দেশ ছিল এটা? অনাচার-অবিচার লুটপাট- এসবের লাইসেন্স দিয়েছিল শেখ হাসিনা, তার কথাই ছিল আমার ক্ষমতা ঠিক রেখে তোরা যা পারিস কর। শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি দস্যু ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন। পুলিশ-সিভিল প্রশাসন প্রত্যেক জায়গায় শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্টরা শত-শত কোটি টাকার মালিক। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান- তারও গ্রামে ছয়তলা বাড়ি। এই তো প্রশাসন, সাজানো এ প্রশাসন এখনো বহাল তবিয়তে। এরা এখনও বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। তারা তো শেখ হাসিনার পক্ষেই কাজ করবে!’
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব উল্লেখ করেন, যারা প্রশাসন পরিচালনা করছেন, তাদের নিয়ে নানা কথাবর্তা শোনা যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘বিপ্লবী সরকার পৃথিবীর দেশে দেশে দেখেছি, তড়িৎ গতিতে দুষিত রক্ত বের করে দেয় সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বিপ্লবী সরকার বলি। তাহলে কী করে এসব ভয়ঙ্কর দুর্নীতিবাজ এবং টাকা লুটপাটকারীরা এখনো প্রশাসনে অবস্থান করতে পারে?’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অতি ধনী লোকের সৃষ্টি হয়েছে। তারা কারা? যারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে টাকা লুট করেছে, যারা মেগা প্রজেক্টের নামে টাকা লুট করেছে, যারা পদ্মাসেতুর নামে টাকা লুট করেছে, যারা শেয়ার বাজারসহ বিভিন্ন সেক্টরে লুট করেছে তারা আজ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। এদের লোকজনই বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। নতুন করে ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটুক তা দেশের মানুষ তা চায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বের কোন দেশের সাথে কোনো অসম চুক্তি করেছে কি-না তা দেশের মানুষ জানতে চায়। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে এসব চুক্তি জনগণের সামনে প্রকাশ করার জোর দাবি জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনারা প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। কারণ, শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পক্ষে হাটতে শুরু করেছে। গণতন্ত্র উত্তরণের এ পথকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসৃণ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।