শেখ হাসিনাকে ফোন করা সেই আ.লীগ নেতা দুই দিনের রিমান্ডে
ভারত থেকে শেখ হাসিনা ফোন করেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে। তাকে একটি চাঁদাবাজি মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এছাড়া রোববার অপর একটি চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে বুধবার ভোর পৌনে ৬টায় বরগুনার তার নিজ বাসভবন আমতলারপার থেকে গ্রেফতার করে ঢাকার পুলিশ। ওই দিন বিকালে তাকে বরগুনা জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ১২ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে ফোন দিয়ে তিন মিনিট কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন মিনিটের ফোনালাপে শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবীরকে বলেন, আপনারা শৃঙ্খলা মেনে দলীয় কার্যক্রম চালাবেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে যথাযথভাবে পালন করবেন।
মো. জাহাঙ্গীর কবীর শেখ হাসিনাকে বলেন, আপা আপনি ঘাবড়াবেন না (মনোবল হারাবেন না)। আপনি ঘাবড়ালে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। আমরা শক্ত আছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঘাবড়াবো কেন। আমি ভয় পাইনি। আপনারা দেখছেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে মেরে কিভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের মেরেছে। বোরকা পরে মেরেছে। এ দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যেভাবে আছেন থাকেন।
এরপর ঢাকা থেকে পুলিশের একটি বিশেষ টিম বরগুনা এসে ১৪ আগস্ট সকালে মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। ওই দিন দুপুরে বিএনপি নেতা মো. হারুন অর রশিদ হাওলাদারের দায়ের করা একটি চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ কর হয়।
মামলার বাদী বিএনপি নেতা মো. হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, বরগুনা সদর রোডে হারুন মোটরস নামে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। মো. জাহাঙ্গীর কবীর ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি আমার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে আমাকে ব্যবসা করতে দেবেন না। আমি চাঁদা না দেওয়ার আমার দোকানটি তিনি দখল করে নেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এতদিন আমি মামলা করতে পারিনি।
মো. জাহাঙ্গীর কবীরের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মো. জাহাঙ্গীর কবীরের বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। তিনি বরগুনা শহরে স্বচ্ছ রাজনীতি করেন। তিনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ১৩ বছর পর হারুন অর রশিদ হাওলাদারের একটি সাজানো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ছাড়া ৭২ বছরের একজন বৃদ্ধ হার্ট ও কিডনি রোগে আক্রান্ত। আমরা আদালতে আবেদন করেছিলাম তাকে জেলখানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
অপরদিকে ১৫ আগস্ট বিকালে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবীরসহ ৬ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে বরগুনা থানায় মামলা করেছেন বরগুনা পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রবিউল ইসলাম মামুন। মামলায় প্রধান আসামি মো. জাহাঙ্গীর কবীর।
মামলার অন্য আসামি হলেন- মিজানুর রহমান ওরফে দালাল মিজু, সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা কিসলু, বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ অলি, গোলাম কিবরিয়া পিন্টু ও পৌর কাউন্সিলর মো. রইসুল আলম রিপন।
বাদী রবিউল ইসলাম মামুন বলেন, ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬টার সময় মো. জাহাঙ্গীর কবীরের নির্দেশে বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের লেক পাড়ের পূর্ব পাশে পাকা রাস্তার উপর থেকে ওই আসামিরা আমাকে জোরপূর্বক ধরে মো. জাহাঙ্গীর কবীরের চেম্বারে নিয়ে যায়। আসামিরা আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। জাহাঙ্গীর কবীর আমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে আমাকে গুম করে ফেলবে। আমার বাবা আ. রব খান ৬ লাখ টাকা দিলে জাহাঙ্গীর কবীর আমাকে ছেড়ে দেন।
পরবর্তীতে আমি ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার সময় বরগুনা অগ্রণী ব্যাংক শাখা থেকে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে দ্বিতীয় ঘটনাস্থল বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পশু হাসপাতাল রোড সংলগ্ন বরগুনা অগ্রণী ব্যাংক শাখার সামনে থেকে বাসায় ফেরার সময় মিজানুর রহমান মিজুর নেতৃত্বে অন্য আসামিরা আমাকে মারধর করে জাহাঙ্গীর কবীরের চেম্বারে নিয়ে যায়।
মো. জাহাঙ্গীর কবীর অন্য আসামিদের সহায়তায় আমার কাছে আবার ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি টাকা দিতে না পারায় জাহাঙ্গীর কবীর অন্য আসামিদের সহায়তায় একটি সাদা স্ট্যাম্পে ৪ লাখ টাকা লিখে জোরপূর্বক আমার স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে আমাকে বরগুনা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এতদিন মামলা করতে পারিনি।