সকল জায়গা থেকে ভারতকে বয়কট করা হবে : সালমান
টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখছে বাংলাদেশ। এতে দেশের ৯ জেলার কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপর্যয়ের মুখে। এখন পর্যন্ত বন্যায় দেশের ৬ জেলায় অন্তত ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ফেনীতে পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশে আবারও ভারতবিরোধী স্লোগান উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে আকস্মিক বন্যার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতকেই দায়ী করছে। তাইতো জনপ্রিয় ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির মুখ খুললেন ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে। প্রতিবাদের ভাষায় তুললেন বয়কটের ডাক।
এর আগে বুধবার বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে রাত তিনটায় ভারত সম্পর্কিত এক ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে হাজির হন সালমান। সেখানে এসে তিনি প্রতিশ্রুতি হিসেবে জানান, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) ঠিক দুপুর দুইটায় লাইভে এসে ভারতকে একটা গিফট দিব।’ তাইতো কথামত যথাসময়ে ফেসবুকে এসে একটি ভিডিও শেয়ার করেন সালমান। সেখানে ভারতকে কীভাবে বয়কট করা যায়, তা জানিয়ে জোর গলায় কিছু পরামর্শ দিলেন তিনি।
সালমান বলেন, ‘এরপর আসছে মিডিয়া। ভারতের যেই মিডিয়া, যেই টিভি আমাদের টিটকারি মেরে, আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, তাদের প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন আমাদের মিডিয়াতে এখনও আরামসে চলছে। সবমিলিয়ে আমরা তাদের সুবিধাই দিয়ে দিচ্ছি।’
সালমান বলেন, ‘ভারতীয় সরকার ভারতের মানুষদের ঠিকমত ট্রিট করে না। সে দেশের সরকারের নির্যাতনে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে আছে। এক বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারত সরকার তাদের দেশের ৬০-৭০ হাজার আদিবাসীকে ভিটেহারা করে দিয়েছে। সেটি কোন বাঁধ, যেই বাঁধ খোলার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ডুবে মারা যাচ্ছে। হয়ত আরও মানুষ মারা যাবে। ৪৮ বছর পর ভারত এভাবে বাঁধ খুলে দিয়েছে। ভারত জেনে শুনে ইচ্ছে করেই কোনো সতর্কতা ছাড়াই বাঁধটি খুলে দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা না প্রস্ততি নিতে পেরেছি, না উদ্ধার করতে পেরেছি তাই ভারতীয় ভারতের সরকারকে বোঝা উচিৎ, বাংলাদেশেরও জানা উচিৎ- আমরা কারও পুতুল না।’
সালমানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারতকে উপহার দেওয়ার কথা রেখে অভিনেতা বললেন, ‘এবার আমি যেই গিফটটি দেওয়ার কথা বলেছিলাম, সেটি আমি একা দিতে পারব না, তবে সেটি খুবই সিম্পল। অন্তত এক মাসের জন্য, যদি ন্যুনতম লজ্জা আমাদের থাকে, আসলেই যদি আমরা কিছু করতে চাই, তাহলে ভারতীয় প্রত্যেকটা পণ্য কেনা বন্ধ রাখতে হবে। বাংলাদেশে যত ক্যাবল অপারেটররা আছেন, যারা টেলিভিশন চ্যানেলকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদেরকে বলতে হবে আপনারা কোনো ভারতীয় চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না। যদি প্রচার করতেই হয়, তাহলে ভারতীয় বিজ্ঞাপন থেকে আসা সম্পূর্ণ টাকা বন্যার্তদের ফান্ডিংয়ের জন্য দিতে হবে। কারণ আজ ভারতীয়দের জন্য এই অবস্থা হয়েছে। ভারতের প্রত্যেকটি পণ্য যা আছে তার সব কিছু অন্তত এক মাসের জন্য হলেও বন্ধ রেখে বোঝাতে হবে আমরা কারও পুতুল না, আমরা কারও নির্ভরশীল না; শুধু আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব।’
সবশেষ সালমান বলেন, ‘এই যে বন্যার আলোচনার আগে ভারতের আলোচনা করছি, এর কারণ প্রত্যেকবার যখন বন্যা হবে, খারাপ সময় আসবে তখন কী শুধু সেলিব্রেটিরা এসেই ভিডিও করবে, ফান্ড করবে, তারপর কী রেস্কিউতে যাবে? আমরা সবাই, আর্টিস্ট, সরকার, প্রত্যেকটি মানুষ ভারতীয় পণ্য থেকে বিরত থাকব, এভাবেই ভারতকে উপহার দিব; শুধু এটা বোঝাতেই আমরা ভারতের পুতুল না।’
সালমানের এই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। মন্তব্যঘরেও সালমান সরাসরি ভারতকে সকল শ্রেণী নির্বিশেষে বয়কট করার আহ্বান জানান। এছাড়াও ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্যাক্স আরোপের কথাও তোলেন সালমান। তাতে ব্যপকহারে সম্মতিও জানাতে দেখা যায় নেটিজেনদের।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন সালমান। শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরব ছিলেন তিনি। এবার ভারতের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুললেন এই অভিনেতা।