সাভার-আশুলিয়ায় দুই হত্যা মামলা, এনামসহ ৪৭৯ আসামি
সাভার (ঢাকা)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা চালিয়ে মারধর ও গুলি করে শিক্ষার্থীকে হত্যার দায়ে সাভার ও আশুলিয়ায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। দুই মামলায় সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানসহ আসামি করা হয়েছে ৪৭৯ জনকে।
নিহত সাকিনুর রহমান গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থানার কিশোরগাড়ি এলাকার ডালিমের ছেলে। তিনি স্ত্রীসহ আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
নিহত অপরজন হলেন সাভারের আউকপাড়া এলাকার আলমগীরের ছেলে সাজ্জাদ। তিনি সোনারগাঁওয়ের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সাকিনুর হত্যা মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান (৬১), ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন ভূইয়া (৩৮), আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মাদবর (৫৮), আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির সরকার (৪০), আ.লীগ নেতা মঞ্জু দেওয়ান (৫৮), মোয়াজ্জেম হোসেন (৫০), মোতালেব ব্যাপারী (৫৫), আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ মন্ডল (৫৭), এনামুল হক মুন্সী (৫০), মতিউর রহমান মতি (৫২), সাদেক ভূইয়া (৫৭), নুরুল আমিন মন্ডল (৫২), আমিনুল ইসলাম (৪৮), বাহারউদ্দিন (৪৭), আ. কাদের মুন্সী (৫৯), আমিনুল ইসলাম খান (৩৭), লুৎফর রহমান জয় (৩৬), মমতাজ উদ্দিন মেম্বার (৫০), জাফর আলী (৫৫), শাহাদত হোসেন খান (৫৫), মইনুল ইসলাম ভূইয়া (৪০), শাহআলম মাস্টার (৫২), নাদিম (৩৫), রহম আলী (৪৫), সাইদ (৫৫), শাকিল (৪০), শেখ উজ্জল (৪৯) শফিক মাদবর (৩৬), সাইফুল শিকদার (৩৮), জাকির হোসেন (৫০), দেলোয়ার ভূইয়া (৪০), মনির ভূইয়া (৩৮), আকিজুল (৪০), আনোয়ার হোসেন (৪০) সহ ১৫৮ জন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
সাভার মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, পৌরসভার মেয়র আব্দুল গনি, মো. নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা (৬৩), নুরে আলম সিদ্দিকি, আলী (৪২), মশিউর রহমান খান সম্রাট (৫৪), মাসুদ চৌধুরী (৫৫), মিজানুর রহমান ওরফে জি এস মিজান (৫৫), সানজিদা আতার মুক্তা (৪২), আতিকুর বহমান আতিক (৩৬), আব্দুল হালিম (৫৫), ফখরুল আলম সমর (৫২), মো. সুজন মিয়া (৪৫), এরশাদুর রহমান এরশাদ (৫৮), আতাবুর ওরফে শিপন (৩৬), সুজন মিয়া (৩০), মিনহাজ উদ্দিন মিনা (৫২), মহসিন বাবু (৪২), রিপন (৩৫), ইলিয়াস মিয়া (৩৮), মো. শামীম, মো. আব্দুল হাকিম (৪৫), মো. জামান (৩৫), মো. জসিম উদি্দন (৬০), আমির আলী (৪০), নান্নু মিয়া (৪২), রায়হান (৪৩), শামীম (৩২), আ. সামাদ (৪৪), মো. রিদুয়ান মোল্লা (৩২), জাহাঙ্গীর (৪০), ইসমাইল (৪৫), টিপু (৩৫), খাটা মনির (৪০), মো. মনির হোসেন (৫৫), মো. আলমগীর হোসেন ভূইয়া (৬৫), মো. ইসহাক বেপারী (৫৫), জুয়েল (২৫), টিপু (২৮), ফয়সাল (৩৫), আ. আওয়াল মামুন (৩২), মজিবর রহমান (৬০), বাবুল মিয়া (৫৮), মোহন মিয়া (৩০), সাদ্দাম হোসেন (৩০), মাহফুজুর রহমান (৩০), তনু (৩০), শুক চাঁন মোল্লা (৫৫), আজম খান (৩০), মামুন সিককার (৩৬), আনোয়ার হোসেন (৫৫), আতাউর রহমান আতা (৫০), শাহাদাৎ হোসেন (৫০), মো. শাহিদুর রহমান ওরফে সাইদুল (৫০), জিসান (৩২), কামরুল হাসান শাহিন (৪৮), মেহেদী হাসান তুষার (৪৫), দেলোয়ার হোসেন দিলু (৫৮), মো. শিপলু (৫০), মনছুর হোসেন খান গেদু (৬২), আহমেদ রুবেল (৩৬) সহ ৩২১ জন। দুই মামলায় আসামি হিসাবে ৪৭৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আশুলিয়া থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে সাকিনুর বলিভদ্র বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করার জন্য বাসা থেকে বের হন। এর প্রায় ৪৫ মিনিট পরে তার স্ত্রী খবর পান সাকিনুর আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ের আরএসটি টাওয়ারের দক্ষিণ পাশে রাস্তার ওপরে গুরুতর আহত হয়ে পড়ে আছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদী জানতে পারেন তার স্বামীকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। পরে তিনি গনস্বাস্থ্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখেন তার স্বামী সাকিনুর মারা গেছেন।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট প্রায় ৮০০/৯০০ আন্দোলনকারী বাইপাইল মোড় ও আশপাশের রাস্তার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাদের ওপর ১ থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ আওয়ামী অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাতনামা আরও আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে ও গুলি বর্ষণ করে। এ সময় সাকিনুর রহমানসহ অনেকেই দৌড়ে পালানোর সময় আসামিদের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাদের লাঠিসোঁটা দিয়া এলোপাতাড়ি মারপিট করে এবং গুলি করে আসামিরা। এ সময় সাকিনুর গুলিবিদ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী নিয়ে দাফন করে পরিবার।
সাভার থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নিহত সাজ্জাদ গত ৫ আগস্ট সকাল ৭টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখান গেলে পরিবার থেকে বেশ কয়েকবার তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাজ্জাদ ফোন ধরেননি। এরপরে বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে সাজ্জাদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানতে পারে পরিবার। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।
সাভার মডেল থানা পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আব্দুর রাশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আলমগীর নামের একজন ৩২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ব্যাপার আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।