সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে উত্তেজনা, ১৫ বছর লুটপাট করে আত্মগোপনে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান
জি এম ফরহাদুল মজুমদার
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজধানীর সিদ্ধেশ^রী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে চলেছে লুটপাট। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই গা ঢাকা দিয়েছেন এই লুটপাটের নাটের গুরু স্কুলটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম ময়না। পালাতে পারেননি স্কুলটির ছাপোষা প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মোল্ল্যা। তিনি গত ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব দিতে পারেননি। অজ্ঞাত স্থান থেকে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম ময়নার পাঠানো পদত্যাগপত্র উপস্থাপন করে নিজ দায় স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ১৫ বছর গৃহবন্দী ছিলাম। এরপর থেকে তিনি হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি। আর এ নিয়ে গত তিন দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে স্কুলটিতে।
এদিকে এক যুগের বেশি সময় স্কুলটিকে শোষণকারীদের পতনের পরই গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ বাংলামাধ্যমের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও ইংরেজি মাধ্যমের সহকারী শিক্ষক শ্যামা আক্তারের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তবে শ্যামা আক্তার এখনও পদ আঁকড়ে আছেন। এমনকি তিনি গভর্নিং বডির সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান পলাতক ময়নার অনুসারীদের নিয়ে স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপচেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এই দখলচেষ্টায় বাধাঁ দিলে বাংলা মাধ্যমের ৬জন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়, যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই হাসপাতালে ভর্তি হন প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মোল্ল্যা। তবে বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে দেখা করার নিদিন থাকায় হাসপাতাল ছেড়ে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক। তিনি স্কুলে আসছেন এমন খবর পেয়ে তিনি উপস্থিত হওয়ার আগেই তার কক্ষে দুটি তালা মেরে দেন বিক্ষুব্ধরা।
প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মোল্ল্যা জানান, অফিসে অনেক ডকুমেন্টস রয়েছে। সেই সব ডকুমেন্টস যাতে আমি নিতে না পারি সে কারণে তালা মারা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
তিনি স্কুলের অনিয়ম স্বীকার করে বলেন, এখানে অনেক শিক্ষকের নিয়োগের বৈধতা নেই। আবার সকল নিয়ম ভেঙ্গে অযাচিত সুবিধা নিয়েছে অনেকে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর এখানে আমি অনেকটাই গৃহবন্দী ছিলাম। স্কুলের কোথায় কি হয়েছে সব করেছেন চেয়ারম্যান আর দুই জন সহকারী প্রধান শিক্ষক।
ইংরেজি মাধ্যমের সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম মানা হয়নি বলেও স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক। বলেন, বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। যাকে ইচ্ছে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুবিধা দেয়া হয়েছে। আমি কিছুই করতে পারিনি।
আওয়ামী পরিবারের সদস্য পরিচয়ে স্কুলে চাকুরি নেয়া শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর ভাতিজা বউ হিসেবে পরিচিত মির লাইজু। বৃহস্পতিবার লাইজু স্কুলের শিক্ষিকা জান্নাতুল উম্মির ওপর চড়াও হন।
জান্নাতুল উম্মি বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলে এসেছেন জেনে আমরা সবাই তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। লাইজু এসে আমাকে চড় মারে।
সহকারি প্রধান শিক্ষক শ্যামা আক্তারকে তার নিয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, এসব প্রশ্ন কেন আসছে। যা জানার প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জানেন। এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলবো না। এ দিকে মির লাইজুর মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওযা যায়।